শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৪:৪৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
শহীদ জিয়া ও বিএনপির শিক্ষা সংস্কার এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ

শহীদ জিয়া ও বিএনপির শিক্ষা সংস্কার এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ

শায়রুল কবির খান :

জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন ১৯৭৭ সালে। ১৯৭৮ সালে প্রফেসর মুস্তাফা বিন কাসেমের নেতৃত্বে একটি জাতীয় শিক্ষা কমিটি গঠিত হয়। এর আগে একই বছর ড. কুদরত-ই খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছিল। এই কমিশনের সুপারিশের আলোকে গঠিত ‘মৌলিক শিক্ষা একাডেমি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে যার নাম জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় ময়মনসিংহ সদরে।

অধ্যাপক মুস্তফা বিন কাসেমের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি ১৯৭৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ‘অন্তর্বর্তীকালীন শিক্ষানীতি’ সুপারিশ পেশ করে। এতে দেশে শিক্ষার হার বিবেচনায় দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির পরামর্শ দেয়া হয়। এর আগে দেশের শাসনব্যবস্থায় ‘৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর ১৯৭৬ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার প্রয়াসে গঠিত হয় ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যা পরিষদ’।

১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রেসিডেন্টের ভাষণে জিয়াউর রহমান বৃত্তিমূলক কারিগরি শিক্ষাকে ‘জাতির জন্য কলাণ্যকর’ আখ্যায়িত করেছিলেন। বৃত্তিমূলক কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে কৃষি শিক্ষা ও চিকিৎসা সস্প্রসারণ বিষয়টিতে বেশি জোর দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। একইসাথে সংসদে তার ভাষণে গুরুত্ব পায় তৈরি পোশাক শিল্পখাত।

এই শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে দেশে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের প্রসার ঘটে। তৈরী হয় দক্ষ মানবসম্পদ। এর ফলে তৈরি পোশাক শিল্প সবচেয়ে বেশি সম্প্রসারিত হয়। প্রবাসেও এই দক্ষ জনশক্তির অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। তৈরি পোশাক শিল্প ও প্রবাসে কর্মসংস্থান সৃষ্টি- দু’টিই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনকালে শুরু। এই দুই খাতের মাধ্যমেই দেশের অর্থনৈতিক মজবুত ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

জিয়াউর রহমানের হাতে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। দলের ঘোষণা পত্রের ২১ নম্বর ধারায় সংযুক্ত করা হয় ‘গণমুখী ও জীবন নির্ভর শিক্ষা কর্যক্রম’। বর্তমানে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যাপক বিস্তৃত হয়েছে।

১৯৮১ সালের প্রেসিডেন্ট জিয়া শহীদ হওয়ার আগের বছর, ১৯৮০ সালে দেশে গণশিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন। এর মাধ্যমে শিক্ষাবঞ্চিত বয়স্ক বিশাল জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়াই ছিল শহীদ জিয়ার মূল লক্ষ্য। পরবর্তীকালে দেশবাসী এই গণশিক্ষার সুফল পায় এবং এখনো পাচ্ছে।

মাদরাসা শিক্ষাকে মূলধারায় যুক্ত করার লক্ষ্যে শহীদ জিয়াউর রহমানই মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড গঠন করেছিলেন। ১৯৭৮ সালে মাদরাসা শিক্ষা অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে ১৯৭৯ সালের জুনে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সম্প্রসারণে শহীদ জিয়ার এই পদক্ষেপ ছিল যুগান্তকারী ও সুদূর প্রসারী।

এখানেই শেষ নয়। দেশে কর্মমুখী, ধর্মীয়, নৈতিক ও উচ্চ শিক্ষার প্রসারে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়ার শান্তি ডাঙায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে ১৯৮০ সালে জাতীয় সংসদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস করা হয়।

১৯৮০ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য অভিন্ন চাকরি বিধি ও জাতীয় বেতন স্কেলের প্রান্তিকের ৫০% দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৮০-৮১ সালে উন্নয়ন প্রকল্পে থানা পর্যায়ে পাবলিক লাইব্রেরি কাম অডিটোরিয়াম স্থাপন প্রকল্প প্রণয়ন করেন প্রেসিডেন্ট জিয়া।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির শাসনকালেই ১৯৮১ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর অধীনে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় সংখ্যা এক লাখ ৩৪ হাজার ১৪৭টি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৫ হাজার ৫৯৩টি।

স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় ক্ষমতাগ্রহণ করে প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সরকার। বিএনপি তথা খালেদা জিয়ার সরকার ক্ষমতায় আসার প্রথম বছরেই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের বিনা বেতনে পড়াশোনা করার ব্যবস্থা করে দেয়। ১৯৯২ সালে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ও গণশিক্ষা বিভাগকে একত্র করে স্বতন্ত্র ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ গঠন করা হয়। এছাড়া ২০০৫ সালে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে বিএনপি সরকার।

দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ সংগঠন সার্কের প্রতিষ্ঠতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে ও বিএনপির শাসনামলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আধুনিক সংস্কার হয়েছে। পাশাপাশি এ সময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অসংখ্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। সরকারের সহযোগিতায় বেরসরকারি পর্যায়েও এ সময় অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং কলেজ পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে। ইতিহাস এর জ্বলন্ত স্বাক্ষী। কেউ চাইলে রাজনৈতিক ভিন্ন মতের কারণে তা অস্বীকার করতে পারেন। কিন্তু ইতিহাস মুছে ফেলা যাবে না।

লেখক : সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিককর্মী

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877